অন্যান্য কলকাতা 

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

শেয়ার করুন

মতিয়ার রহমান : দেশ ও জাতি গঠনে মূল চালিকা শক্তি হলো শিক্ষক, অধ্যাপক এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বিদগ্ধ জ্ঞানীগুণী পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই অমোঘ সত্য কথাটি শুধু মনে প্রানে বিশ্বাসই করেননি বরং বাস্তবে তা করেও দেখিয়েছেন। তার আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম এর ফলস্বরূপ দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটে বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির জগতে পুনরুজীবন এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ১৩ বছরের শাসনকালে সুস্থ সমাজ গঠন ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলার আপামর জনসাধারণের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রসারে যা যা করণীয় তিনি সবটাই করেঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে নয়া ইতিহাস রচনা করেছেন। ২০১১ সালে বাংলার মসনদে বসে তিনি প্রথম দৃষ্টি দেন মাদ্রাসা শিক্ষার উপর। আজকে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যখন আমরা পেছনের দিকে তাকাই তখন আমরা দেখতে পাই মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকীকরণ হয়েছে। ৩০০ টি মাদ্রাসায় ৬০০টি স্মার্ট ক্লাসরুম ও ১১৫ টি কম্পিউটার ল্যাব ,আইসিটি স্কিমের অধীনে ১৭৬ টি মাদ্রাসার ১৩৮ টি স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি হয়েছে। আরও ৬০০ টি স্মার্ট ক্লাসরুম, ১০০ টি কম্পিউটার ল্যাব এবং ৭৬ টি সাইন্স ল্যাবের আপগ্রেশন করা হচ্ছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রীদের বই ,খাতা, ব্যাগ ,মাদ্রাসা ইউনিফর্ম ,জুতো এবং মিড ডে মিল দেওয়া হচ্ছে এবং অষ্টম শ্রেনীরতোর ছাত্র-ছাত্রীদের সাইকেল ,ট্যাব ও ইনসেন্টিভ ফর গার্লসের টাকাও দেওয়া হয়েছে।

বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা আপগ্রেডেশন ও হয়েছে। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের আধুনিক শিক্ষার জন্য ১৪ টি জেলায় ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে যা নজিরবিহীন। স্বীকৃত অনুদানবিহীন মাদ্রাসার পরিকাঠামো উন্নয়নে ৩০.৯৫ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। ২৩৫ টি স্বীকৃত অথচ অনুদানবিহীন জুনিয়ার হাই মাদ্রাসাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি নতুন প্রকল্পের আওতায় এনে শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের সাম্মানিক বেতন প্রদান করেছে। ১৯৬ টি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, ২৭৬ টি টয়লেট ,১২৪টি টিউব অয়েল তৈরি করা হয়েছে। আরও ৭০০টি মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেয়ার কাজ চলছে। ঐক্যশ্রী প্রকল্পে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের ৪.০৭ কোটি টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। লেখাপড়ার সুবিধার্থে ৮৭ লক্ষ কন্যা পেয়েছে কন্যাশ্রী এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু ছাত্রীরাও। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের শিক্ষাগত উন্নতির জন্য ৬০৫ টি হোস্টেল স্থাপন করা হয়েছে, এই হোস্টেলে থাকা প্রতিটি পড়ুয়াকে বার্ষিক ১০,০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সংখ্যালঘু ছাত্রী ও সংখ্যালঘু কর্মরতা মহিলাদের জন্য ঐক্যতান নামে ২১৬ টি বেড সম্পন্ন একটি বিশাল ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে কলকাতার কৈখালীতে। সংখ্যালঘু অধুসিত এলাকায় ৩৯ টি আই টি আই এবং ৮ টি পলিটেকনিক কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ৫৫১ কোটি টাকা ব্যয় করে কলকাতার নিউ টাউনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঝাঁ চকচকে ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে এবং পার্ক সার্কাসেও আরও একটি ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে ।১১৫ কোটি টাকা খরচ করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের ও ছাত্রদের জন্য আলাদা আলাদা হোস্টেল নির্মাণ হয়েছে। বর্তমানে ১২৫০ জন ছাত্রছাত্রী হোস্টেলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে ।

Advertisement

এছাড়া নির্মিত হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুবিশাল রাজকীয় গেট। ৩৭৭৩১ জন সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার জন্য ২৭৭.০৪ কোটি টাকা শিক্ষা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। যোগ্য শ্রী প্রকল্পে কৈখালী হজ টাওয়ারে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে চাকরি পরীক্ষার আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ৯৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা কে অনগ্রসর শ্রেণীর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন রাজ্যের ৬১৪ টি স্বীকৃত সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ করেছে। ৩০৪৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষক কর্মী তাদের পছন্দমত মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সুযোগও পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ৩.৮৯ কোটি স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে যা প্রায় ৭৮০০ কোটি টাকা অর্থ মূল্য। এছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঐক্য শ্রী স্কলারশিপ যা প্রথম শ্রেণি থেকে পি এইচ ডি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা পেয়ে থাকে। এছাড়া প্রত্যেক বছর প্রায় ১১০০ ব্যক্তি ঋণ ও প্রায় এক লক্ষ স্বনির্ভর দলের সদস্যদের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কতটা বেশি আন্তরিক তা সহজেই অনুমান করা যায় ২০২৪- ২৫ বর্ষে বাজেটে চোখ রাখলেই। ২০২৪ – ২৫ বর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৫৫৩০.৬৫ কোটি টাকা। বাজেট ২০২৪ -২৫ সংখ্যালঘু বরাদ্দে দেখা যাচ্ছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। আন এডেড মাদ্রাসার সহায়তার জন্য ১০০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের জন্য ৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বৃত্ত নিগমের জন্য ৭ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহ ভাতা বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা। মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য ১০৫ কোটি টাকা। জেলায় সংখ্যালঘুদের হোস্টেল নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। সংখ্যালঘু ছাত্র ছাত্রীদের ট্যালেন্ট সাপোর্ট প্রকল্পে ১২০১ কোটি টাকা। আন এডেড মাদ্রাসার বিজ্ঞানসামগ্রী ক্রয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা। সংখ্যালঘু পড়বাদের সাইকেল প্রদানের জন্য ২২০ কোটি টাকা। উর্দু ভাষার প্রসারে ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কারমাইকেল ও বেকার হোস্টেল সংস্কার ও বর্ধিতকরণের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জন্য ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। সংখ্যালঘু সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র নির্মাণে ২০ কোটি টাকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সুপরিকল্পিত জনমুখী বাজেট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক কল্যাণকে যে সুনিশ্চিত করবে সেটা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ